ঘোষণার বেশি দরে ডলার ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থা

0

অনেক ব্যাংক এখন নির্ধারিত হার না পেয়ে ঘোষিত হারের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনছে। এ কারণে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা। এমন ১২টি ব্যাংক শনাক্ত করার পর আজ এসব ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আজকের বৈঠকে বিষয়টি জানানো হবে। উচ্চ হারে ডলার বিক্রির বিষয়ে বৈঠকের আগে সব ব্যাংকেরে এমডির সঙ্গে একটি ব্যাঙ্কার্স মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংকের এমডিকে ডলার বিক্রির বিষয়ে পৃথক সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এসব ব্যাংকের এমডির কাছে বেশি হারে ডলার বিক্রির কারণ জানতে চাওয়া হবে। এ বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হতে পারে। পরবর্তী পুনরাবৃত্তি জরিমানা হতে পারে.

আজকের বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণের কারণে কিছু ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি হারে ডলার বিক্রি করছে। এভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারে ছেড়ে দিলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, যে কোনো ব্যাংক বেশি দামে ডলার বিক্রি করে বেশি মুনাফা করছে, তেমনটা নয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে ডলারের রেট ১০৭ টাকা হওয়া উচিত, তাহলে তাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া উচিত। তা না করে ব্যাংকারদের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। আবার রেমিট্যান্স, রপ্তানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রি, আমদানি ও নগদ ডলারের জন্য বিভিন্ন রেট দেওয়া হচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন কিছু আছে কি না তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে সংকট ঠিকই আছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় ডলার বিক্রি কমে গেছে। তাই এক দাম ঘোষণা করে অন্য দামে বিক্রি করা বৈধ নয়। আবার ঘোষিত অতিরিক্ত হার পরিশোধের প্রক্রিয়া মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ। তাই ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে আমদানি দায় মেটাতে প্রতি ডলার ২৫ শতাংশ বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। হার নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১.০৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে সব স্তরে সর্বোচ্চ ডলারের দর নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। তবে অনেক ব্যাংক নির্ধারিত হার মেনে চলে না।

ঘোষিত হারের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনার বিষয়ে ২৭শে মার্চ ‘ব্যাঙ্কেই ডলারের কালো বাজার’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বর্ধিত হারে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ১২টি ব্যাংকের ওপর তদন্ত চলছে। মাজবাউল হক। তিনি বলেন, গভর্নর এসব ব্যাংকের লেনদেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই প্রতিবেদনে সব ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা মূল্যে রেমিটেন্স কেনার ঘোষণা দিলেও কিছু ব্যাংক ১১৩ টাকা পর্যন্ত দামে কিনছে। সরকারি মালিকানাধীন দুটি ব্যাংকসহ অন্তত ১২টি ব্যাংক বেশি হারে ডলার কেনার সঙ্গে জড়িত। এভাবে কেনা ডলার ১১৪ টাকা থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত দামে আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যাংকটি অন্যান্য খাতে আয় বা ব্যয় হিসাবে ঘোষণা করা অতিরিক্ত পরিমাণ দেখায়। অনেক ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *