কার গুদামে কত পণ্য,চট্টগ্রাম

0

রমজানকে সামনে রেখে অনেক পণ্য আমদানি হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। দুই মাস ধরে ছোলা ছাড়া প্রায় সব পণ্যই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল, চিনি, খেজুর ও ডাল। শত শত ব্যবসায়ী এসব পণ্য আমদানি করলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাত্র ৪০ জন ব্যবসায়ীর গুদামে সর্বোচ্চ পণ্য রয়েছে। যেসব পণ্য এখন পাইকারি গন্তব্য চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো আমদানিকারকদের হাত পাল্টে গেছে। এখান থেকে সারাদেশে রমজানের পণ্য যাচ্ছে। যেসব ব্যবসায়ীর পণ্যের মজুদ সবচেয়ে বেশি তারা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার বাসিন্দা। আমদানিকৃত পণ্যের ৭০ শতাংশ এসব প্রতিষ্ঠানের গুদামে মজুত রয়েছে।

এদিকে রমজানে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করেও যারা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে তাদের দমন করতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ অবৈধভাবে পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে কি না, বিষয়টি নজরদারির আওতায় আনতেও বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছয় মাস আগে থেকে এবার রমজানের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসেছে। গত ছয় মাসের আমদানির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রোজায় গড়ে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। ছয় মাসে চাহিদা ছাড়িয়েছে ছোলা। এ কারণে ছোলার দাম কিছুটা সহনীয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে শত শত ব্যবসায়ী ছোলা আনলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র ছয়টি কোম্পানি। তারা শুধু ২ হাজার ৩০০ টন থেকে সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৩০০ টন ছোলা আমদানি করেছে। আমদানিকৃত ছোলার প্রায় অর্ধেকই তাদের। কোম্পানিগুলো হলো- রবি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, টয়ো ফিড লিমিটেড, একে কর্পোরেশন, হোসেন অটোমেটিক ডাল মিল, মাসুদ ট্রেডিং কোম্পানি এবং লাভলী স্টোর।

মটর আমদানির অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী থাকলেও বাজারের নিয়ন্ত্রণ সাত ব্যবসায়ীর হাতে। এ বছর রবি ফুড প্রোডাক্টস এককভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক মটর আমদানি করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মেসার্স শেখ ব্রাদার্স ও বসুন্ধরা ট্রেডিং কোম্পানি। এ ছাড়া কমোডিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি, মাসুদ ট্রেডিং কোম্পানি, মেসার্স আরএস ট্রেডিং, অর্পিতা ট্রেডার্স পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি করেছে। মসুর ডাল আমদানির ৮০টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি করেছে আটটি। বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানিগুলো হলো- রবি ফুড প্রোডাক্টস, মেসার্স এনআর ট্রেডিং, মেসার্স শেখ ব্রাদার্স, মেসার্স চিটাগাং ফিশ প্রোডাক্টস, লাভলি স্টোর, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, লাকি ট্রেডিং এবং এক্সপোর্ট ট্রেডিং বিডি।

খেজুরও এসেছে চাহিদার চেয়ে বেশি। শুকনো ও ভেজা খেজুর আমদানিতে শতাধিক কোম্পানি থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সাতটি কোম্পানি। খেজুরের শীর্ষ আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে অ্যারাবিয়ান ডেটস ফ্যাক্টরি, রয়্যাল ফ্রেশ ফুডস, সাপোয়ানা ফুড ট্রেডিং কর্পোরেশন, মদিনা ফুডস লিমিটেড, রামিসা বিডি লিমিটেড, এডি ফ্রুটস লিমিটেড এবং আল্লাহ রহমত স্টোর।

আমদানিকৃত চিনির ৯০ শতাংশ সিটি, আবদুল মোনেম, দেশবন্ধু, এস আলম ও মেঘনা গ্রুপের কাছে মজুত রয়েছে। অপরিশোধিত তেল আমদানি করা শীর্ষ সাত কোম্পানি হলো- দীপা ফুড প্রোডাক্টস, মেঘনা এডিবল, শবনম ভেজিটেবল অয়েল, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল, বাংলাদেশ এডিবল, সুপার অয়েল রিফাইনারি, মোস্তফা অয়েল প্রোডাক্টস। ছয়টি শিল্প গ্রুপ দেশে আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেলের ৯০ শতাংশ আমদানি করেছে।

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “যে পরিমাণ পণ্য এসেছে তাতে বাজার স্থিতিশীল থাকতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম নয়। তারা যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হবে।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ডলারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এবারও রমজানকে ঘিরে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হয়েছে। পণ্য মজুদ করে কেউ যেন একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারে সেদিকে আমরা সতর্ক আছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, বাজার মনিটর করার জন্য ৪০টি সুপারভাইজরি টিম গঠন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “রমজানের আগে অনেক সমস্যা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বাজারে কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসকদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আমাদের কাছেও তথ্য রয়েছে। কার কী পরিমাণ পণ্য সংরক্ষণ করা আছে সে সম্পর্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *